ইউটিউব থেকে আয় |
ইউটিউব থেকে কিভাবে আয় হয়ঃ-
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ভালোই আছেন।
আজকের ব্লগে আপনাদের সাথে অনলাইন থেকে টাকা আয় করা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। উক্ত আর্টিকেলে আপনারা ইউটিউব থেকে টাকা করা থেকে শুরু করে এই নিয়ে বিস্তারিত লেখা হবে।
উক্ত আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ে আপনার এই বিষয়ে সকল তথ্য জানতে পারবেন। ইউটিউব থেকে টাকা আয় করার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আলোচনা করা হবে।
কিভাবে চ্যানেল খুলবেন কিভাবে ভিডিও আপলোড করবেন এর রকম সকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
অনুরোধ করব আপনারা ব্লগ/আর্টিকেলটি আপনারা মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।
নিচে ধাপ অনুসারে ইউটিউব থেকে টাকা আয় করা নিয়ে লেখা হয়েছে।
১। ইউটিউব চ্যানেল খোলাঃ
আপনারা খুব সহজেই মোবাইল অথবা কম্পিউটার এর মাধ্যমে ফ্রিতে ইউটিউব চ্যানেল খুলতে পারবেন। যাদের কম্পিউটার বা ল্যাপ্টপ নেই তারা চাইলে মোবাইল এর ইউটিউব অ্যাপ এর মাধ্যমে ইউটিউব চ্যানেল খুলতে পারবেন। আপনারা চাইলে যেকোনো একটি ব্রাউজার এর মাধ্যমে youtube.com এর সাইট এ গিয়েও নিজের জন্য ইউটিউব চ্যানেল খুলতে পারবেন। ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের মত সিস্টেম পাওয়ার জন্য ব্রাউজার ডেকস্টপ মোড চালু করে একাউন্ট খুলুম।
ইউটিউব চ্যানেল খোলার সময় আপনারা দুটি অপশন বা দুই ধরণের চ্যানেল খোলার অপশন পাবেন।
ক/ personal
খ/ brand
Personal এর মাধ্যমে ইউটিউব চ্যানেল খুললে আপনি উক্ত চ্যানেল এর ইমেইল চেঞ্জ করতে পারবেন না বা আপনি চাইলে কাউকে চ্যানেলের ম্যানেজার বা অন্য কোনো পদে দিতে পারবেন না।আপনি আপনার চ্যানলের ইমেইল এড্রেস ও চেঞ্জ করতে পারবেন না। (পরে চাইলে পারসোনাল থেকে ব্র্যান্ড অথবা ব্র্যান্ড থেকে পারসোনাল চ্যানেলে ট্রান্সফার করতে পারবেন।
Brand এর মাধ্যমে ইউটিউব চ্যানেল খুললে আপনি চাইলে যেকোনো সময় আপনার চ্যানেলের ইমেইল এড্রেস চেঞ্জ অথবা অন্য কাউকে আপনার পাশাপাশি চ্যানেলের মালিক/ম্যানেজার দিতে পারবেন।
২। ইউটিউব চ্যানেল খোলার জন্য কি কি লাগেঃ
১। মোবাইল/ল্যাপটপ/কম্পিউটার
২। ইন্টারনেট
৩। ই-মেইল
৪। চ্যানেলার নাম
৫। চ্যানেলের লোগো
৬। চ্যানেলের কভার ফটো
৭। ইত্যাদি
*চ্যানেল খোলার আগে চ্যানেলের নাম/লগো/কভার ফটো সিলেক্ট করে / বানিয়ে রাখবেন।
৩। ইউটিউব চ্যানেল কাস্টামাইজড করাঃ
চ্যানেল খোলার পর চ্যানেল কে কাস্টমাইজড করা অনেক জরুরী। আপনার চ্যানেলের ডিস্ক্রিপশনে আপনার চ্যানেল নিয়ে বিস্তারিত লিখুন। এবাউট সেকশনে আপনার চ্যানেলের সামারি ও সোস্যাল মিডিয়া লিংক অ্যাড করে দিন।
হোম অপশন নিজের মতো করে সাজিয়ে নিন। চ্যানেল এর কান্ট্রি(দেশ) সিলেক্ট করুন।বর্তমানে বাংলাদেশেও মনিটাইজেশন চালু হয়। চ্যানেল কান্ট্রি অবশ্যই বাংলাদেশ দিন। আরো কিছু কাজ আছে আপনারা চ্যানেল এর অপশন থেকে তা করে নিবেন।
৪। ভিডিও আপলোড করাঃ
ভিডিও আপলোড করার সময় একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে। ভিডিও পাবলিশ/পাব্লিক করার আগে মানসম্মত টাইটেল/ডিস্ক্রিপশন/ট্যাগ/প্লেলিস্ট দিন। ভিডিও অবশ্যই আপনার নিজের হতে হবে। কারো কাছ থেকে কোনো ভিডিও কপি করলে আপনার চ্যানেল কখনোই গ্রো করবে না। এতে আপনার চ্যানেল সাসপেন্ড করে দিতেও পারে। কখনোই কারো ভিডিও কপি করা যাবে না। ভিডিওর কোয়ালিটি ও ভিডিওতে থাকা অডিও কোয়ালিটি ভালো হতে হবে। অডিও কারো কাছ থেকে কপি করা যাবে না। আপনারা চাইলে ফ্রি বা কপিরাইট ফ্রি মিউজিক ইউটিউব অডিও লাইব্রেরী থেকে ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারেন। আপনি কপিরাইট ফ্রি ভিডিও/ফুটেজ ও ব্যবহার করতে পারেন। সব থেকে ভালো নিজের ভিডিও দেয়া ও যদি ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক দরকার হয় তাহলে ইউটিউব অডিও লাইব্রেরী থেকে ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারেন।
৫। কিভাবে ভিডিও বানাবেনঃ
যদি আপনি মোবাইল ইউজার হন তাহলে আপনার ভিডিও গুলো কাইনমাস্টার এর মাধ্যমে ইডিট করতে পারেন।আরো অনেক ইডিটিং সফটওয়্যার আছে আপনারা চাইলে সেগুলো দিয়েও ভিডিও ইডিট করতে পারেন।তবে, মোবাইল এর জন্য ভালো মানের ভিডিও ইডিট করার জন্য কাইনমাস্টার সবথেকে ভালো।
কম্পিউটার বা ল্যাপটপ হলে আপনার সব থেকে উন্নত মানের ভিডিও বানাতে পারেন। আপনারা প্রিমিয়ার প্রো, আফটার ইফেক্ট সহ আরো অনেক সফটওয়্যার এর মাধ্যমে ভালো মানের ভিডিও বানাতে ও ইডিট করতে পারবেন।
৬। কিভাবে ভিডিও আপলোড করবেনঃ
আপনারা মোবাইল এর ইউটিউব অ্যাপ এর মাধ্যমে ভিডিও আপলোড করতে পারেন। ব্রাউজার এর ডেক্সটপ মোড চালু করেও কম্পিউটার এর মত করে ভিডিও আপলোড করতে পারবেন।
ভিডিও আপলোড করার পর থেকে শুরু ভিডিও পাবলিশ করার আগে আপনাকে উক্ত ভিডিও টাইটেল/থাম্বনেইল সহ আরো অনেক কিছু এড করতে হবে।
৭। থাম্বনেইল কিভাবে বানানো যায়ঃ
মোবাইল দিয়ে করতে Pixellab/picsart/snapseed/logomakerplus/canva এর অ্যাপ গুলোর মাধ্যমে বানাতে পারেন। এই অ্যাপ গুলো থেকে আপনারা চ্যানেলের লোগো/ব্যানার ও বানাতে পারেন।
কম্পিউটার এর জন্য আপনারা এডুবি ইলাস্ট্রেটর/ফটোশপ/ক্যানভা সহ আরো অনেক সফটওয়্যার বা ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে থাম্বনেইল সহ লোগো/ব্যানার/কভার ফটো বানাতে পারবেন।
৮। টাইটেল/ট্যাগ/ডিস্ক্রিপশনঃ
আপনার ভিডিওর সাথে যায় এই রকম উন্নত মানের টাইটেইল/ট্যাগ/ডিস্ক্রিপশন দিতে হবে।
ডিস্ক্রিপশনে আপনারা ভিডিও নিয়ে সংক্ষিপ্ত বলে দিতে পারেন যাতে কেউ সহজেই বুঝতে পারে আপনার ভিডিও কোন বিষয়ের উপর বানানো হয়েছে।
টাইটেইল ও ডিস্ক্রিপশন যত ভালো মানের হবে আপনার চ্যানেল তত গ্রো হবে।
৯। ইনকাম শুরু করাঃ
একটা চ্যানেল খোলার পর ভিডিও আপলোড করার পর সাথে সাথেই আপনাকে মনিটাইজেশন বা আয়ের সুযোগ করে দিবে না। আপনি মনিটাইজ ছাড়া অন্য উপায়ে আয় করত পারেন।
ইউটিউব থেকে অফিসিয়ালি টাকা বা মনিটাজেশন পেতে কিছু শর্ত পূরন করতে হয়।
শর্ত হলোঃ
১০০০ সাবস্ক্রাইবার
৪০০০ ঘন্টা ওয়াচটাইম
( সর্বশেষ বার মাসের মধ্যে)
অর্থাৎ আপনি চ্যানেলের লাস্ট বার মাসের মধ্যে আপনার চ্যানেলে ১০০০ সাবস্ক্রাইবার ও ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচটাইম লাগবে।
আপনার চ্যানেলের বয়স ২ বছর ৩ মাসে এখানে লাস্ট বার মাসে আপনার চ্যানেলে ১০০০ সাবস্ক্রাইবার ও ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচটাইম লাগবে।
এখানে ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচটাইম বলতে, কেউ আপনার ভিডিও ১ মিনিট দেখল কেউ আবার ৩ মিনিট দেখল। এইরকমভাবে ১+৩=৪ মিনিট হলো এইভাবে তার চ্যানেলের মোট ওয়াচটাইম থাকতে হবে ৪০০০ ঘন্টা।
প্রাইভেট+আনলিস্টেড ভিডিওতে থাকা ওয়াচটাইম গণনা হবে না।
মনিটাইজ পাওয়ার আরো কিছু শর্ত আছে যেমন, নিজের ভিডিও হতে হবে।
১০। মনিটাইজেশন চালু ও ইনকাম শুরুঃ
যখন আপনাদের চ্যানেলের সর্বশেষ বার মাসের মধ্যে উপরের শর্ত পূরন হবে তখন আপনারা মনিটাইজেশন এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদন করার জন্য আপনার একটি গুগল এডসেন্স একাউন্ট লাগবে। এটিও আপনারা ফ্রিতে খুলতে পারবেন। গুগলে সার্চ করুন google adsense তাহলেই আপনারা এডসেন্স একাউন্ট খুলতে পারবেন। কারণ আপনার ইউটিউব থেকে যত টাকা আয় হবে সকল টাকা উক্ত এডসেন্স এ যোগ হবে। এর পর এডসেন্স থেকে ব্যাংক একাউন্টে ট্রান্সফার করতে পারবেন।
১১। এডসেন্স একাউন্ট খোলার সময় সতর্কতাঃ
ক/ যার নামে একাউন্ট করবেন তার নামে যাতে আইডি কার্ডের সাথে মিল থাকে
খ/ যেই ইমেইল এর মাধ্যমে এডসেন্স একাউন্ট করবেন সেই ইমেইল এ যেন বয়স ১৮+ দেয়া থাকে।
৩। এড্রেস+পোস্ট কোড+ মোবাইল নাম্বার যাতে ভূল না হয়।
সতর্কতাঃ একজন মানুষের নামে একটি-ই এডসেন্স খোলা সম্ভব। একের অধিক খোলার চেষ্টা করলে সকল একাউন্ট সাস্পেন্ড হয়ে যেতে পারে।
১২। এডসেন্স ভেরিফাইঃ
চ্যানেলের সাথে যখন এডসেন্স কানেক্ট হবে এবং আপনার ভিডিওতে এড বা বিজ্ঞাপন দেখানো হবে, তখন আপনার ভিডিওতে দেখানো বিজ্ঞাপনের থেকে কিছু টাকা আপনার এডসেন্স এ যোগ হবে।
যখন আপনার ভিডিওতে দেখানো এড মাধ্যমে আপনার এডসেন্সে ১০$ যোগ হবে তখন গুগল কর্তূক আপনার ঠিকানায় একটি চিঠি পাঠানো হবে। যেটা এডসেন্স চিঠি বা পিন ভেরিফাই চিঠি বলে। উক্ত চিঠি আপনার দেয়া ঠিকানায় পাঠানো হবে,আপনি এডসেন্স এর একাউন্ট করার সময় যে ঠিকানা দিয়েছেন সেই ঠিকানায় চিঠি দেয়া হবে।
চিঠিতে একটি ৬ সংখ্যার কোড বা পিন থাকে। উক্ত পিন বা চিঠি পাওয়ার পর এডসেন্স একাউন্ট এ লগইন করে পিন সাবমিট করেই একাউন্ট ভেরিফাই হয়ে যাবে।
১৩। এডসেন্স এ ব্যাংক একাউন্টঃ
আপনার এডসেন্স একাউন্ট এ যখন ১০০$ হবে তখন আপনারা দেশের যেকোনো ব্যাংক একাউন্ট এড করতে পারেন। বাংলাদেশী হলে রকেট একাউন্ট ও এড করতে পারেন। ব্যাংক একাউন্ট এড করার পর যখন আপনার এডসেন্স এ ১০০ ডলার হবে তখনই আপনার ব্যাংক একাউন্টে ১০০$ এর সমপরিমান টাকা পাঠানো হবে।
ইউটিউব থেকে আয় করা টাকা প্রতি মাসের ১০/১১ তারিখ আপনার এডসেন্স এ যোগ হয়। তা কিছুদিন পর উক্ত টাকা এডসেন্স থেকে আপনার ব্যাংক একাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
১৪। ব্যাংক হতে টাকা উত্তোলনঃ
আপনার ব্যাংক একাউন্ট এ টাকা আসলে আপনি মেসেজ পেয়ে যাবেন। তারপর ব্যাংক হতে চেক এর মাধ্যেম অথবা এটিএম কার্ডের মাধ্যমে যেকোনো সময় টাকা তুলতে পারবেন।
১৫। কিভাবে বেশী টাকা আয় সম্ভবঃ
আপনার ভিডিওতে যত বেশী ভিউ হবে আপনার আয় তত বেশী হবে।
আপনি চ্যানেলের ভিডিওতে স্পনসর/রেফার/এফিলিয়েট মাধ্যেমও অনেক টাকা আয় করতে পারেন।
এইভাবে আপনারা ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম করা যায়। আপনাকে লেগে থাকতে হবে। ইউটিউবে সফল হতে আপনাকে অনেক দিন ধৈর্য ধরে লেগে থাকতে হবে। লেগে থাকলে আপনি ইনশাআল্লাহ সফল হবে। আপনার জন্য দোয়া কামনা করি।
আজকের মত এই পর্যন্তই ।যদি উক্ত আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনাদের কাছে শেয়ার করুন।
প্রতিদিন এই রকম প্রয়োজনীয় আর্টিকেলটি পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন।
আমাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলঃSUBSCRIBE
দোয়ামে ইয়াদ রাখনা
খোদা হাফেজ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
কোনো কিছু জানার বা অভিযোগ থাকলে নিচে কমেন্ট করুন