অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে করবেন ?
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শব্দটি আমাদের সকলেরই শোনা। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলতে আমরা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কোনো পণ্য বা সার্ভিস হাজার হাজার মানুষের কাছে পৌছে দেয়াকে বুঝি। হাজার হাজার মানুষের মধ্যে কিছু সংখ্যক মানুষ উক্ত পণ্য বা সার্ভিসটি গ্রহন করবে। তখন উক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে বিক্রিত পণ্যের মূল্যের উপর ভিত্তি করে কিছু কমিশন উক্ত মার্কেটারকে ( যিনি পণ্যের মার্কেটিং করেছেন) দেয়া হয়। এটাকেই সাধারণত অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলে।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে করবেন |
যেমন, আমাজন.কম থেকে আমি একটি পণ্যের ( মোবাইল ) মার্কেটিং করলাম। উক্ত মোবাইলের দাম ১৫০০০ টাকা। উক্ত মোবাইলটিকে আমি বিশ্বের ২ লক্ষ মানুষের কাছে পৌছে দিলাম। এখন ২ লক্ষ মানুষের মধ্যে ১০০ জন উক্ত মোবাইলটি আমার দেয়া লিংক এর মাধ্যমে আমাজন.কম থেকে ক্রয় করল। এখন উক্ত পণ্যের উপর আমাকে ৩-১০% পর্যন্ত কমিশন দিবে।প্রতি সেলের উপর আমাকে কমিশন দেয়া হবে।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বর্তমানে বিশ্বের সেরা একটি আয়ের সুযোগ।অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে এক টাকাও ইনভেস্ট করার প্রয়োজন নেই।আপনি পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে থেকে এই কাজ করতে পারবেন। শুধু প্রয়োজন হবে একটি ইন্টারনেট যুক্ত মোবাইল/কম্পিউটার
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে করবেনঃ
আপনি যেই প্লাটফর্ম/মার্কেটে এ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে চান সেই সাইটে আগে আপনাকে একটি অ্যাফিলিয়েট একাউন্ট করতে হবে। অ্যাফিলিয়েট একাউন্ট করতে হলে আপনার একটি সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট থাকতে হবে।যেটার সাহায্যে আপনি তাদের পণ্য বা সার্ভিস কে সবার কাছে পৌছে দিবেন। সেটা হতে পারেঃ
ফেসবুক একাউন্ট
ফেসবুক পেইজ
ফেসবুক গ্রুপ
ওয়েবসাইট
ইউটিউব চ্যানেল
টেলিগ্রাম গ্রুপ
টেলিগ্রাম চ্যানেল
আরো অনেক সাইট আছে
এমন কোনো একাউন্ট যেটার সাহায্যে আপনি তাদের প্রোডাক্ট গুলোকে প্রমোট বা লাখ লাখ মানুষের কাছে পৌছে দিতে পারেন।
অ্যাফিলিয়েট একাউন্ট করার সময় তাদেরকে আপনার যেকোনো একটি সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট দিতে হবে।কারণ, তারা আপনার কাছে চাইবে আপনি কোন মাধ্যমে তাদের পণ্য গুলোকে প্রমোট করবেন।
অ্যাফিলিয়েট একাউন্ট করার পর দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে তারা আপনার একাউন্ট কে রিভিউ করে এপ্রুভ করে নেবে।এপ্রুভ হওয়ার পর উক্ত সাইট বা অনলাইন শপ থেকে পণ্যের লিংক নিয়ে আপনি আপনার সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট এর মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিবেন।আপনাকে এক টাকাও খরচ করতে হবে না। শুধু অনলাইন শপ থেকে যেকোনো পণ্যের লিংক নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পোস্ট করে দিতে হবে। আপনি বিভিন্ন জায়গায় / বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট করবেন। দেখা গেল আপনি ১০০০০ মানুষের কাছে উক্ত লিংক টি পৌছে দিলেন। ১০০০০ মানুষের মধ্যে ৫০ জন উক্ত পণ্য বা সার্ভিস টি আপনার দেয়া লিংক থেকে ক্রয় করল। এখন আপনি প্রতিটি পণ্যের উপর ৩-১০% / ৩০-০% পর্যন্ত কমিশন পাবেন।যত সেল হবে আপনার আয় তত বেশি হবে।
এখন আপনাদের মাথায় একটি প্রশ্ন নিশ্চই আসবে যে আমি কাউকে একটি ইয়ারফোনের অ্যাফিলিয়েট লিংক দিলাম।সে আমার লিংক এ প্রবেশ করল কিন্তু উক্ত ইয়ারফোন না কিনে অন্য ইয়ারফোন অথবা অন্য কোনো পণ্য কিনল তাহলে কি আমি কমিশন পাব ?
হ্যা। অবশ্যই পাবেন।আপনারা জেনে অবাক হবেন যে আপনার লিংক এ ক্লিক করার পরবর্তী ২৪ ঘন্টার মধ্যে সেই ব্যক্তি যে বা যতগুলো পণ্য কিনবে সকল পণ্যের উপর নির্ধারিত হারে কমিশন পাবেন।মানে, আপনি কাউকে চার্জারের লিংক দিলেন, সে লিংক এ ক্লিক করল কিন্তু তখন কোনো পণ্য কিনল না।
কিছুক্ষন পর অর্থাৎ লিংক এ ক্লিক করার ১২ ঘন্টা পর সে আবার উক্ত সাইটে গেল (এখন আপনার লিংক থেকে না গিয়ে সরাসরি গেল) এবং একটি ক্যামেরা কিনল।এখন আপনি উক্ত ক্যামেরার উপর রাখা নির্ধারিত কমিশন পাবেন।
কি কি করলে কমিশন পাবেনঃ
লিংক এ ক্লিক করার পরবর্তী ২৪ ঘন্টার মধ্যে উক্ত ডিভাইস থেকে যতটি পণ্য ক্রয় করবে আপনি তত টি পণ্যের উপর কমিশন পাবেন।
লিংক এ ক্লিক করে সরাসরি কোনো পণ্য কিনলে
সকল পণ্যের কমিশন রেট বা পরিমাণ উক্ত পণ্যের দাম এবং ধরনের উপর নির্ভর করবে
লিংক এ ক্লিক করার পরবর্তী ২৪ ঘন্টার মধ্যে উক্ত ডিভাইস থেকে যদি ১০ টি পণ্য ক্রয় করে তাহলে আপনি ১০ টি পণ্যের উপর কমিশন পাবেন।
কোন কোন সাইট বা মার্কেটে অ্যাফিলিয়েট করতে পারেনঃ
ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট প্লেস-
Amazon.com(বিশ্ব)
Amazon.in(ভারতের জন্য)
Shareasale.com
Clickbank.com
Bluehost.com
Shopify.com
Rakuten.com
eBay.com
Aliexpress.com
Impact.com
দেশের কিছু জনপ্রিয় মার্কেট প্লেস-
Bdshop.com
Daraz.com
Ajkerdeal.com
Evaly.com
Dianahost.com
উপরে দেয়া কিছু সাইট পিজিক্যাল ও ভার্চুয়াল পণ্য বা সেবা দিয়ে থাকে।
যেমন,
আমাজন/ক্লিক ব্যাংক/আলি এক্সপ্রেস থেকে কাপড়,মোবাইল,চার্জার,টিভি,ফ্রিজ,রাউটার সহ পিজিক্যাল পণ্য নিয়ে অ্যাফিলিয়েট করা যায়।
ব্ল হোস্ট থেকে ডোমেইন বা হোস্টিং সেল করে অ্যাফিলিয়েট করা যায়।
ডায়না হোস্ট থেকে ডোমেইন বা হোস্টিং সেল করে অ্যাফিলিয়েট করা যায়।
বিডিশপ,দারাজ,আজকেরডিল,ইভ্যালি থেকে কাপড়,মোবাইল,চার্জার,টিভি,ফ্রিজ,রাউটার সহ পিজিক্যাল পণ্য নিয়ে অ্যাফিলিয়েট করা যায়।
ইমপ্যাক্ট থেকে সফটওয়্যার,থিম,সোর্স কোড,ডোমেইন হোস্টিং সেল করে অ্যাফিলিয়েট করা যায়।
উপরে দেয়া তথ্যমতে,আমার লিংক থেকে কেউ কোনো কিছু কিনলে আমি কমিশন পায়।
একইভাবে আমার ব্ল হোস্ট অ্যাফিলিয়েট লিংক থেকে কেউ কোনো ডোমেইন বা হোস্টিং নিলে আমি নির্ধারিত কমিশন পাব।
মনে করুন, আপনি এনভাটো.কম থেকে একটি থিম/সোর্স কোড/প্লাগিন এর মার্কেটিং করেছেন। উক্ত পণ্যের দাম 29$=২৪৩০ টাকা। উক্ত পণ্যটি আপনি বিশ্বের ২ লক্ষ মানুষের কাছে পৌছে দিলেন। এখন ২ লক্ষ মানুষের মধ্যে ১০ জন উক্ত পণ্যটি আপনার দেয়া লিংক এর মাধ্যমে এনভাটো থেকে ক্রয় করল। এখন উক্ত পণ্যের উপর আমাকে ৩০-৫০% পর্যন্ত কমিশন দিবে। এখন হিসাব করে দেখি উক্ত পণ্যের উপর আপনি কত টাকা এনভাটো থেকে পাবেন।
৩০% কমিশন হলেঃ
২৪৩০ টাকায় ৭২৯ টাকা পাবেন।যেহেতু পণ্যটি ১০ জন মানুষ ক্রয় করেছে তাই সর্বমোট পাব (১০X৭২৯)=৭২৯০ টাকা।
৪০% কমিশন হলেঃ
২৪৩০টাকায় ৯৭২টাকা পাব।যেহেতু পণ্যটি ১০ জন মানুষ ক্রয় করেছে তাই সর্বমোট পাব (১০X৯৭২)=৯৭২০ টাকা।
৫০% কমিশন হলেঃ
২৪৩০ টাকায় ১২১৫ টাকা পাব।যেহেতু পণ্যটি ১০ জন মানুষ ক্রয় করেছে তাই সর্বমোট পাব (১০X১২১৫)=১২১৫০ টাকা।
এসব পণ্যের উপর এর থেকে বেশি কমিশন পেতে পারেন।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে মাসে কয়েক লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব।আপনার আয় নির্ভর করবে আপনার মার্কেটিং এবং সেলের উপর।
পরবর্তীতে আলোচনা করব কোন সাইট কত % কমিশন দেয় এবং আরো কিছু জনপ্রিয় অ্যাফিলিয়েট সাইট নিয়ে।পরবর্তী আপডেট পেতে আমাদের সাথেই থাকুন
বিঃদ্রঃ উপরে দেয়া সকল কমিশন এর পরিমান আপনাদের বুঝানোর জন্য ব্যবহার করা।এর পরিমান কম বেশি হতে পারে কমিশন নির্ভর করে পণ্যের ধরন ও দামের উপর।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
কোনো কিছু জানার বা অভিযোগ থাকলে নিচে কমেন্ট করুন